আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তারা কি আইভীর বিকল্প

বিষাদ সিন্ধু:

আসছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনা, হিসেব নিকেশ চলছে ভোটারদের মাঝে। বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীর মাঝেও রয়েছে এ নিয়ে নানামুখি আলোচনা। এসব আলোচনা বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে আইভীর পরিবর্তে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন কাউকে মনোনয়ন দিবে কি না! যদি দেয় তাহলে কে হতে পারেন সে প্রার্থী এবং আইভীর থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন কে আছেন, ভোটারদের মাঝে এ নিয়ে চলছে চলুচেরা বিশ্লেষণ।

সূত্র বলছে, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংসদ সেলিম ওসমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল ও খোকন সাহাকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। তারা দুজনও মুখিয়ে ছিলেন মেয়র প্রার্থী হবেন। সে মোতাবেক তারা দুজন আদাজল খেয়ে আইভীর বিষোদগার করতে মাঠেও নেমেছিলেন। এছাড়া খোদ সেলিম ওসমান নিজেও খানপুরের দিকে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রয়োজনে তিনি ‘ওই চেয়ারে (মেয়র) বসবেন জানিয়ে আভাসও দিয়েছিলেন। এখন শোনা যাচ্ছে ব্যবসায়ী প্রবীর সাহাকে নিয়ে মাঠে নামা হয়েছে। আইভী বিরোধী শিবির থেকে তাকেও মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে বর্তমানে কারো কারো কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে তাদের বাইরে থেকেও আরও তিনজনের নাম। তারা হলেন সাংসদ শামীম ওসমান পত্নী সালমা ওসমান লিপি, তার ছোট ভাই তানভীর আহম্মেদ টিটু এবং চেম্বার সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। মূলত আইভীর পরিবর্তে অন্য একজনকে প্রার্থী করার লক্ষ্যেই ওই পক্ষটি মাঠে নেমেছে। এবং তাদের আপাত কাজ হচ্ছে আইভীকে বিতর্কিত করা। যাতে করে দলের কাছে আইভীর ইমেজ নষ্ট করা যায় এবং সাধারণ মানুষও যেন তার প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়েন।

সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভীকে বিতর্কিত করার জন্য প্রতিদিনই কোনো না কোনো মাধ্যমের আশ্রয় নিচ্ছে জনৈক দাদা। তিনি পর্দার আড়াল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচা করে মেয়রকে বিতর্কিত করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার জন্য ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিকল্প এষনও তৈরি হয়নি। ফলে এবারের নির্বাচনেও তাকেই নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হবে। এই বিষয়টি যখন অনেকটাই স্পষ্ট তখনই নিজ দলেরই একটি পক্ষ আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন মেয়রকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে।

তারা আরও বলেন, পক্ষটি ভালো করেই জানেন মেয়র আইভীকে টপকে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসার মত যোগ্য এখনও তারা হয়ে উঠেননি। এ কারণে তারা নোংরা রাজনীতির পথ অবলম্বন করে মাঠে নেমেছেন অনেক আগের থেকেই। সম্প্রতি পক্ষটি মরণ কামড় দিতে আদাজল খেয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নেমেছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই আইভীর বিরুদ্ধে পক্ষটি মাঠে সক্রিয় রয়েছে। নানা ভাবেই আইভীবে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন এতদিন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে মেয়র একজন বিতর্কিত ব্যক্তি তা জাহির করতে নানা তৎপরতাও চালাচ্ছেন। এসব ঘটনায় খোদ আইভী নিজেই বলেছিলেন, এসব নোংরা রাজনীতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা নোংরামি করছে। একই রকম বক্তব্য পাওয়া গিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছ থেকেও। তিনিও বলেছিলেন, নির্বাচন এলেই একটি পক্ষ নোংরামিতে মেতে উঠেন। এবারও তারা নোংরামি করছেন।

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অ্যাড খোকন সাহা। তার টার্গেট সিটি করপোরেশনে তাকে মেয়র নমিনেশন যদি নাও দেয়া হয় তাহলে জেলা পরিষদ পাবেন। মূলত সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি মাঠে নেমেছেন

সূত্র বলছে, খোকন সাহা নিজেও জানেন এই পদের জন্য তিনি যোগ্য নন। তারপরও তিনি মেয়র হবেন, এমন বাসনা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই মেয়র আইভীর বিরুদ্ধচারণ করছেন। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেও এই দাদা ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে সাংসদ সেলিম ওসমানেরও বিরোধীতা করেছিলেন।

এদিকে যাদের আইভীর পরিবর্তে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে দল এবং সাধারণ মানুষের কাছে তারা কতটা গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্নও রয়েছে সবার মাঝে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারাও বলছেন, আইভীর বিকল্প হিসেবে ওই ছয় জনের কেউ নন। এমনকী আইভীর বিকল্প এখনও অন্য কেউ গড়ে উঠেনি। সুতরাং আগামী নির্বাচনে আইভীই হবেন মেয়র প্রার্থী, এটুকু মোটামুটি সকলেই বিশ্বাস করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, “নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়ৎ আইভীর বিকল্প এখনও কেউ তৈরি হয়নি। তিনি বহুমুখি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে লাখো মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। যত অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র করা হোক কোনো লাভ হবে না। আর নৌকা দেওয়ার মালিক একমাত্র শেখ হাসিনা। তিনি সব জানেন। বুঝেন। কাকে কোথায় বসাতে হবে সেটা তার থেকে ভালো আর কেউ জানেন না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, জননেত্রী শেখ হাসিনাই নির্ধারণ করবেন কাকে নৌকা তুলে দেওয়া হবে।”